গল্প নয় সত‍্যি : ১ টাকায় চপ বিক্রি করেই বিত্তশালী জামালপুরের হিমাংশু

17th July 2021 5:57 pm বর্ধমান
গল্প নয় সত‍্যি : ১ টাকায় চপ বিক্রি করেই বিত্তশালী জামালপুরের হিমাংশু


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :  অতিমারির মধ্যেও জ্বালানির আঁচে জ্বলছে গোটা দেশ। অগ্নিমূল্য সবেরই বাজার দর। কিন্তু তাত কি !এই সব নিয়ে বিশেষ মাথাই ঘামাতে চান না পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পাঁচড়ার ’চপ-তেলেভাজা’ বিক্রেতা হিমাংশু সেন। বরং তিনি মনে করেন এই কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও ’ষোল আনা’ অর্থাৎ ১ টাকা পিস দরে ‘চপ’ও অন্য ’তেলে ভাজা’ বিক্রি করেও বিত্তশালী হওয়া যায়। শুধু মনে করাই নয়,বাস্তবে সেটা তিনি করেও দেখিয়ে চলেছেন।’চপ’ বিক্রেতা হিমাংশুবাবুর এমন ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ডাই এলাকার বেকার দের ’আত্মনির্ভর’ আর্থিক রোজগারে দিশা দেখাচ্ছে। যা চাক্ষুষ করে অনেকে এখন বলতে শুরু করেছেন,“মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ’চপ’  শিল্প নিয়ে ’হক’ কথাই বলেছিলেন “।  জামালপুরের পাঁচড়া গ্রামের দক্ষিনপাড়ায় বাড়ি হিমাংশু সেনের। বাড়ির কাছেই রয়েছে তাঁর প্রসিদ্ধ চপ-তেলে ভাজার দোকান। প্রতিদিন দুপুর ৩ টায় খুলে যায় তাঁর ’চপের’ দোকান।তারপর থেকেই পরিবারের সবাই মিলে দোকান চালান। দোকানের এক ধারে বসে গ্যাসের উনানে গরম তেলের কড়াইয়ে ফুলুড়ি,সিঙ্গারা , ভেজিটেবিল  চপ ,আলুর চপ এই সবকিছুই ভাজেন হিমাংশু বাবু । এছাড়াও ঘুগনি এবং অল্পস্বল্প করে রসোগোল্লা ,পান্তুয়া, ল্যাংচা  ও মাখা সন্দেশও বিক্রির জন্যে তিনি তৈরি করেন। তবে চপ বিক্রিই তাঁর মূল ব্যবসা । দোকান খোলার কিছু সময় পর থেকেই খরিদ্দারের ভিড় বাড়তে শুরু করে হিমাংশু বাবুর দোকানে ।খরিদ্দার সামলান হিমাংশু বাবুর স্ত্রী বন্দনাদেবী,ছেলে কাশিনাথ ও পুত্রবধূ শম্পা। ’চপ’ ভাজা থেকে শুরু করে ’চপ ,ঘুগনি‘ বিক্রি এই দুই কাজে রাত ৯ টা পর্যন্ত সেন পরিবারের কেউ একমুহুর্ত ফুরসত পান না।প্রায় ৩০ বছর ধরে ১ টাকা মূল্যে ’চপ-তেলেভাজা, বিক্রি করেই হিমাংশুবাবু ও তাঁর পরিবার এখন এলাকার  বিত্তশালীদের মধ্যে একজন হয়ে উঠেছেন।  যা দেখে অনেকের ঈর্ষা হয় ঠিকই । কিন্তু তারা হিমাংশু বাবুর ব্যবসায়ীক বিচক্ষণতার কাছে মাথা নত না করে পারেন না ।  দুর্মূল্যের বাজারেও ১টাকা পিস দরে চপ-তেলে ভাজা বিক্রী করে লাভের মুখ দেখার ব্যবসায়ীক রহস্যটা কি ? এই প্রশ্নের উত্তরে  হিমাংশু সেন বলেন,তাঁদের পরিবার এক সময়ে আর্থিক ভাবে অত্যন্ত দুর্বল ছিলো ।  রোজগারের বিকল্প আর কোনও পথ সেভাবে খুঁজে না পেয়ে তাঁর বাবা বিশ্বনাথ সেন অনেক বছর আছে বাড়ি লাগোয়া জায়গায় চপের দোকান খুলে বসেন ।তাঁর বাবা এলাকার মানুষের আর্থিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে তখন  ৮০ পয়সা ’পিস’ দরে চপ-তেলে ভাজা বিক্রী করা শুরু করেছিলেন। এর পর বেশ কয়েক বছর হল তিনি মাত্র  ২০ পয়সা দাম বাড়িয়ে ১ টাকা পিস দরেই চপ-তেলেভাজা বিক্রী করে চলেছেন। শুধু এক প্লেট ঘুগনির দাম ২ টাকা নেন বলে হিমাংশু বাবু বলেন।হিমাংশুবাবু দাবি করেন , এলাকার গরিব ,নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাই তাঁর দোকানের ১ টাকা মূল্যের ’চপ-তেলেভাজা’ ও ২ টাকা প্লেটের ঘুগনির সবথেকে বড় ক্রেতা ।   এছাড়াও দুর-দুরান্তের ক্রেতাতো রয়েইছে।  প্রতিদিন ১০ কেজি বেসনের ’চপ- তেলেভাজা’
বিক্রী হয় হিমাংশুবাবুর দোকানে। শুধু ১০ কেজি বেসনই নয়। এর সঙ্গে প্রতিদিন লাগে ১ বস্তা আলু ,৫ কেজি মটর ,হাজার টাকার সরষের তেল সহ অন্যান সামগ্রী।হিমাংশু বাবু জানান,এইসব সামগ্রী কিনে দোকান চালানোর জন্যে প্রতিদিন তার প্রায় ৩৫০০ টাকার মতো  খরচ হয়। ১ টাকা পিস দরে চপ- তেলেভাজা আর ২ টা প্লেট দরে ঘুগনি বিক্রী করেও গড়ে প্রতিদিন  ৫০০- ৭০০ টাকা লাভ  থাকে বলে হিমাংশু বাবু জানান । সেই লাভের পয়সাতেই তিনি সংসার চালানোর পাশাপাশি মেয়ে কেয়া কে উচ্চ শিক্ষিত করেছেন । এম এ ও বিএড পাশ করা পাস করা মেয়ের বিয়েও তিন বছর আগে ধুমধাম করে দিয়েছেন । ছেলের ছেলে অর্থাৎ নাতি  কুশল ও নাতনি কৃত্তিকাকেও উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন নিয়ে গ্রামের প্রথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন হিমাংশুবাবু । এছাড়াও চপ বিক্রীর লাভের পয়সা দিয়েই  তিনি পরিবারের সাবেকি  বাড়িটিকে ঝাঁ চকচকে বানিয়েছেন ।একই সঙ্গে চপের দোকানের লাগোয়া জায়গায় সম্প্রতি নতুন একটি সন্দর দোতলা বাড়িও তৈরি করেছেন । নূন্যতম মূল্যে অধীক বিক্রী-ই তাঁর ব্যবসায়ীক সাফল্যের চাবিকাঠি বলে হিমাংশু সেন জানিয়েছেন। পাঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রেমনাথ ঘোষাল বলেন,’অর্থনীতিবিদরা বলছেন ভারত সহ গোটা বিশ্ব এখন  অর্থনৈতিক মন্দায় ধুুঁকছে ।  ভারতীয় ’জিডিপির’ পতনের প্রভাব পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতে পড়বে বলেও  অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন ।  দেশের এমন  অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও ১ টাকা মূল্যে ’চপ’ বিক্রী করে হিমাংশু সেন কোন যাদুতে লাভের মুখ দেখছেন সেটাই  সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয়।হিমাংশু সেনের ব্যবসায়ীক সাফল্যের বিষয়টি হয়তো  অর্থনীতিবিদদেরও ভাবাবে । কারণ এই কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও হিমাংশু সেনের  ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ড এখন এলাকার বেকার দের  ’আত্মনির্ভর’ আর্থিক রোজগারে দিশা দেখাচ্ছে বলে প্রেমনাথ ঘোষাল মন্তব্য করেন“।পাঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান লালু হেমব্রম জানান ,’চপ-তেলেভাজার দোকান করে জীবনে বড়া হওয়া যায় বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  বলেছিলেন ’। তারজন্য বিরোধীরা ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করতে ছাড়েন নি ।কিন্তু বাস্তবেই পাঁচড়ার হিমাংশু সেন প্রমাণ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ভুল কিছু বলেন নি ।  মুখ্যমন্ত্রী ’হক’ কথাই বলে ছিলেন ।হিমাংশু বাবুর ব্যবসায়ীক ’স্ট্রাটেজির’ কথা জেনে তারিফ করেছেন অর্থনীতি নিয়ে পড়া শুনা জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার ।





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।